NEWS

শ্রেণীকক্ষে শিশুর প্রতি আচরণ


যাঁদের জন্য নিয়ম তাঁরাই জানেন না
 

রং-পেনসিল না আনায় ফেনী সদর উপজেলার বিরিঞ্চি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীদের ৮ মার্চ পিটিয়ে শরীরে দাগ ফেলে দেন বিদ্যালয়টির এক শিক্ষক। এ কারণে তাঁকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়



ছবি: প্রথম আলো



রাজধানীর একটি নামকরা বিদ্যালয়ের নার্সারির ছাত্র সোহেল (ছদ্মনাম)। দুই-এক দিন পর পর সে বিদ্যালয়ে না যাওয়ার বায়না ধরে। কারণ জানতে চাইলে মাকে সে জানায়, শরীরচর্চা শিক্ষকের হাতে বেত দেখে ভয় লাগে। সোহেলের মা বিষয়টি কয়েকজন অভিভাবককে জানান। ওই অভিভাবকেরাও শিক্ষকের হাতে বেত থাকার বিষয়টি তাঁদের সন্তানের কাছ থেকে শোনার কথা জানান।

অথচ ২০০৮ সালের এপ্রিলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এক প্রজ্ঞাপনে সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের শিক্ষার্থীদের (পাঁচ থেকে ১০ বছর বয়সী) প্রতি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, কঠোরতা ও তিরস্কারসহ সব রকম অবাঞ্ছিত আচরণ থেকে বিরত থাকার কথা বলা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনটি জারির কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল, ‘শৈশবকালকে মানুষের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও আবেগিক বিকাশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রকৃতপক্ষে এ সময়েই ব্যক্তিজীবনের সার্বিক বিকাশের ভিত্তি রচিত হয়। সুতরাং শিশুর সুষ্ঠু বিকাশে সহায়তা দেওয়ার জন্য পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে বিশেষ সচেতন প্রয়াস প্রয়োজন।’ কিন্তু যাঁদের জন্য ওই প্রজ্ঞাপন সেই শিক্ষকদের বেশির ভাগই বিষয়টি জানেন না। অনেকে এটি মানেনও না। এ কারণেই সম্প্রতি ফেনী সদর উপজেলার বিরিঞ্চি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের নির্দয় পিটুনির শিকার হয়েছে ওই বিদ্যালয়ের ২০ শিক্ষার্থী। জানা গেছে, রং পেনসিল না আনার কারণে তাদের পেটানো হয়।

শিক্ষকেরা বলেছেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এ ব্যাপারে প্রজ্ঞাপন জারি করলেও তা যথাযথ প্রচার না করায় এমন ঘটনা ঘটছে। রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়েও শিক্ষকদের বেত হাতে ক্লাসে যেতে দেখা গেছে। কথা বলে জানা গেছে, প্রজ্ঞাপনটি সম্পর্কে বেশির ভাগ শিক্ষকই জানেন না।

শিক্ষার্থীদের মারার কারণ সম্পর্কে বিদ্যালয় ও নিজের নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শিক্ষক বলেন, ‘সরকারি প্রাথমিক স্কুলগুলোতে বস্তির ছেলে, বাদাম-চকলেট বিক্রেতারা পড়ালেখা করে। এদের কথা শোনানো যায় না। বেতের বাড়ি না খাওয়া পর্যন্ত নিজেরা মারামারি, গালাগালি করতে থাকে।’ অধিদপ্তরের প্রজ্ঞাপনের কথা জানেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওসব কত কথাই তো অফিসে বসে বলা যায়, সব মানলে এদের আর পড়ানো লাগবে না। আমরা ভালোর জন্যই শাসন করি।’

প্রজ্ঞাপনটি শিক্ষকদের না জানা এবং না মানা সম্পর্কে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শ্যামল কান্তি ঘোষ বলেন, ‘শিশু অধিকার বিষয়ে এখন অনেক সচেতনতা এসেছে। এখন স্কুলে শিশুদের পেটানো হয় না বললেই চলে।’ ফেনীর ঘটনার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘এটা অহরহ ঘটছে তা তো নয়।’

জানা গেছে, বিরিঞ্চি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সেই শিক্ষককে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষের অনুরোধে অভিভাবকেরা ওই শিক্ষকের আচরণের বিরুদ্ধে মামলা করেননি।