Career Guide

এ সময়ের সেরা ১০ ক্যারিয়ার


এইচএসসি পাসের পরেই ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবার উপযুক্ত সময়। ভবিষ্যতে কোন পেশায় যেতে চান তা আগে থেকেই নির্ধারণ করে ফেলুন। সে জন্য দরকার প্রয়োজনীয় প্র‘তি। এক্ষেত্রে বেছে নিতে হবে সময় উপযোগী কোন পেশা। আপনি কোন ধরনের পেশায় আগ্রহবোধ করেন সে অনুযায়ী আপনার ক্যারিয়ার গড়া প্রয়োজন। কারণ আপনার ভুল সিদ্ধান্তের জন্য সঠিক ও উপযোগী চাকরি থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। আর এর মাসুল দিতে আপনার জীবন থেকে অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ভুল চাকরি-নির্বাচনের ফলে একজন ব্যক্তি তার কাজের প্রতি সন্তুষ্ট হতে পারে না। ফলে কর্মজীবনেও তারা সফল হতে পারেন না। তাই ক্যারিয়ার সচেতন মানুষের জন্য সময়ের সেরা ১০টি ক্যারিয়ার সম্পর্কে আসুন জেনে নিই।









টেলিকমিউনিকেশন



বর্তমানে আমাদের দেশে টেলিকমিউনিকেশনে ক্যারিয়ার গড়ার একটা ধুম পড়ে গেছে। এখানে চাকরি করার কারণে একজন কর্মী অনেক সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকে। সাপ্তাহিক ছুটি সরকারি ছুটির সঙ্গে মিল রেখে ধরা হয়। বেতন ও কাজের পরিবেশও ভালো। তাই শিক্ষিত বেকারদের পছন্দের প্রথম সারিতে পড়ে এ সেক্টরের চাকরি এবং এখানে কাজ করার সুযোগও অনেক বেশি। আর এ সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে হলে অবশ্যই ডিগ্রিধারী হতে হবে। পাশাপাশি টেলিকমিউনিকেশনে কোনো কোর্স করা থাকলে ভালো। এ সেক্টরে উদ্যোম ও স্মার্ট প্রার্থীকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। আপনি যদি টেলিকমিউনিকেশনে ক্যারিয়ার গড়তে চান তাহলে প্রতিটা কোম্পানির একটা নিজস্ব ওয়েবসাইট আছে, সেখানে অথবা পত্রিকার মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দেখে সিভি জমা দিতে পারেন। সিভি জমা দিয়ে রাখলে লিখিত পরীক্ষার ডাক আসতে পারে। যদি আপনার সিভি মানসম্মত ও নির্ভুল হয় এবং যে যোগ্যতা চাওয়া হয় তা যদি আপনার থাকে। লিখিত পরীক্ষার পর ভাইবা বোর্ডের সম্মুখীন হতে হবে। সেখানে উত্তীর্ণ হলে আপনার কাঙ্ক্ষিত চাকরিটি পেয়ে যেতে পারেন। আর একটি বিষয় এখানে স্মরণ রাখা প্রয়োজন, এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০০৯ সালে এ টেলিকমিউনিকেশনে প্রায় ৩৬ লাখ নতুন কর্মীর প্রয়োজন হবে। ফলে বর্তমানে এ সেক্টরে চাকরি করার মাধ্যমে উজ্জ্বল ক্যারিয়ার গড়ার সময় এসেছে। বাংলাদেশে যে কয়েকটি সম্ভাবনাময় শিল্প আছে তার মধ্যে টেলি কোম্পানিগুলো অন্যতম। এ সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে হলে গ্র্যাজুয়েটসহ নেটওয়ার্কিং ইলেকট্রিক্যাল মেকানিক্যাল, কম্পিউটার ও টেলিকমিউনিকেশনে জানা থাকলে ভালো।





তাই এ সেক্টরে চাকরি করতে হলে নিজেকে আজই প্র‘ত করুন এবং লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যান।









হিউম্যান রিসোর্স



প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় সব কর্মকর্তা অথবা কর্মচারী নিয়োগ দেয়া এবং তাদের কাজ তদারক করা হিউম্যান রিসোর্স ডিপার্টমেন্টের কাজ। একটি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের চাহিদা অনুযায়ী এইচআর বিভাগ কোম্পানির প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ দিয়ে থাকে এবং কর্মীদের বেতন কাঠামো, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণও দিয়ে থাকে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাহিদা এবং তারা যাতে ঠিকভাবে কাজ করে সেদিকেও নজরদারি করে এ বিভাগ। এ তো গেল কাজের ধরন। এ সুন্দর চাকরিটি পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই মাস্টার্স/এমবিএ মেজর-ইন-এইচআরএস ডিগ্রিধারী হতে হবে। তাহলে চাকরির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। কিছু কাজের পূর্বে অভিজ্ঞতা থাকলে আরো ভালো হয়।









ব্যাংকিং অ্যান্ড ফিন্যান্স



বর্তমান তরুণ-তরুণীদের পছন্দের চাকরির মধ্যে ব্যাংকিং সেক্টর অন্যতম। এর প্রধান কারণগুলো হলো এ সেক্টরে কাজের ভালো পরিবেশের সঙ্গে বেতন কাঠামো অনেক ভালো। তার পাশাপাশি চাকরির নিরাপত্তা আছে এবং পেনশনের ব্যবস্থা আছে। আমাদের দেশে সরকারি ব্যাংকের পাশাপাশি এখন অনেক বেসরকারি ব্যাংক সেবা দিয়ে যাচ্ছে এবং সেবার মান সরকারি ব্যাংক থেকে বেসরকারি ব্যাংকের ভালো বলে গ্রাহক সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বেসরকারি ব্যাংকের। আর সেবার মান উন্নত করতে হলে অধিক কর্মী প্রয়োজন। বর্তমানে চাকরির বাজারে ভালো অবস্থানে রয়েছে ব্যাংকিং সেক্টর। এখানে বিভিন্ন পোস্টের জন্য ভিন্ন ভিন্ন যোগ্যতা চাওয়া হয়। তবে এমবিএ/এমবিএম/পোস্ট গ্র্যাজুয়েট/সিএ ডিগ্রিসহ বিভিন্ন অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়। আপনি যদি ব্যাংকিং সেক্টরে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চান তাহলে উপরোক্ত অভিজ্ঞতা অর্জন করে চেষ্টা করে যান সুন্দর এ সেক্টরে নিজের দক্ষতা প্রমাণ করতে।









এনজিও



আমাদের দেশে চাকরির ক্ষেত্র তৈরিতে এনজিও এক অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। এনজিওগুলো শহর থেকে গ্রামে সব স্থানেই চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করেছে। বিদেশি এনজিওগুলোর পাশাপাশি দেশীয় অনেক এনজিও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ সেক্টরে চাকরির প্রতি তরুণদের আগ্রহ বেশি। আর এর প্রধান কারণ হলো এখানে বেতন অনেক বেশি দেয়া হয়।



যদিও একটু পরিশ্রম করতে হয় এ সেক্টরে তার পরও ভালো একটি অবস্থানে যেতে পারলে অনেক সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়। এ সেক্টরে চাকরির জন্য মাস্টার্স ডিগ্রি, সিএ, এমবিএ ইত্যাদি শিক্ষাগত যোগ্যতা চাওয়া হয়। ইংরেজিতে লেখা ও বলা এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই এ সেক্টরে নিজেকে গড়ে তুলতে চাইলে উপরোক্ত যোগ্যতা অর্জন করে নিন এবং প্রাথমিকভাবে কিছু অভিজ্ঞতার জন্য ফিল্ড লেভেলে কাজ করুন। ধীরে ধীরে আপনি আপনার লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে পারবেন।









টিচিং অ্যান্ড রিসার্চ



শিক্ষাই জাতির মেরুদ একথা আমরা সবাই জানি। যে জাতি যতো বেশি শিক্ষিত সে জাতি ততো উন্নত। আমাদের দেশে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি অনেক বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে এবং দিন দিন এ সেক্টরে কাজের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের পাশাপাশি আরো অনেক ধরনের লোকবল প্রয়োজন হচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বর্তমানে অনেক কোম্পানি রিসার্চ সেন্টার চালু করছে সেখানেও কাজের অনেক সুযোগ রয়েছে। টিচিং অ্যান্ড রিসার্চ এ ক্যারিয়ার গড়তে হলে সৎ ও নিষ্ঠাবান হওয়া বাঞ্চনীয়। শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রয়োজন স্নাতোকোত্তর এমবিএ, পিএইচডি, সিএসই, ইইউ ইত্যাদি। এ সেক্টরে কাজের মাধ্যমে অনেক সম্মান অর্জন করা যায় এবং ভালো পারফর্ম করতে পারলে ভালো অর্থ উপার্জন সম্ভব। তাই যারা টিচিং অ্যান্ড রিসার্চে ক্যারিয়ার গড়তে চান তাদের নির্দিষ্ট যোগ্যতা অর্জন করে এ সেক্টরে আসা উচিত।









মেডিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস



আমাদের দেশের ওষুধ শিল্প অনেক উন্নতি করেছে। বর্তমানে দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে ওষুধ। তাই এ সেক্টরে প্রতিনিয়ত দক্ষ লোকবলের প্রয়োজন হচ্ছে। এ সেক্টরে বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের গুরুত্ব দেয়া হয়। এছাড়া এমএসসি, এমবিএ, এম ফার্ম, বি ফার্ম ইত্যাদি শিক্ষাগত যোগ্যতা চাওয়া হয়। মেডিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস সেক্টরে কাজের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো মাসিক নির্দিষ্ট বেতনের পাশাপাশি টার্গেট পূরণের ওপর অতিরিক্ত টাকা দেয়া হয়। বর্তমানে অনেকেই ডিগ্রি পাস করে এ সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়ে তুলছে। কাজের ক্ষেত্র অনেক বড় হওয়ায় এ সেক্টরে চাকরি পেতে সহজ হয়। কাজের অভিজ্ঞতা বাড়তে থাকলে এখানে খুব দ্রুত বেতন বেড়ে যায়- তাই নতুন যারা চাকরির বাজারে প্রবেশ করছে তাদের জন্য উজ্জ্বল ও সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ার মেডিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস সেক্টর।









গার্মেন্ট অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং



বর্তমানে আমাদের দেশের প্রধান রপ্তানি খাতই হলো গার্মেন্ট অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং। দেশের মোট রপ্তানি আয়ের অধিকাংশই এ খাত থেকে আসছে। বিশাল এ সেক্টরে প্রচুর দক্ষ লোকবল প্রয়োজন পড়ছে। সেই তুলনায় কোম্পানির মালিকরা লোকবল পাচ্ছে না। এ সেক্টরে যেমন প্রয়োজন হচ্ছে সাধারণ শ্রমিক তেমনি প্রয়োজন দক্ষ ও শিক্ষিত লোকবল যারা প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পর্যায়ে কাজ করবে। গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি দেশে অনেক বায়িং প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে যারা বিদেশ থেকে অর্ডার সংগ্রহ করে দেশীয় গার্মেন্টে কাজ পরিচালনা করে থাকে। এখানেও দক্ষ লোকবলের সঙ্কট। এ সেক্টরে বর্তমানে উচ্চ বেতন দিয়ে দক্ষ লোকবল নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানের মালিকরা। এ সেক্টরে গ্র্যাজুয়েটসহ বিবিএ, এমবিএ ইত্যাদি যোগ্যতা চাওয়া হয়। পাশাপাশি মার্চেন্ডাইজিং জানা থাকলে চাকরি পেতে সহজ হয়।









ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড আর্কিটেক্ট



সারাবিশ্বে ইঞ্জিনিয়ারিং এবং আর্কিটেক্টের চাহিদা অনেক বেশি। তারই ধারাবাহিকতায় আমাদের দেশেও বর্তমানে এ সেক্টরের প্রতি নতুনদের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ইঞ্জিনিয়ারিং ও আর্কিটেক্টের ওপর বিভিন্ন কোর্স রয়েছে। এ সেক্টরে চাকরি করতে হলে বিএসসি ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, বিএসসি ইন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং, নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার, এমবিএ, মাস্টার্সসহ বিভিন্ন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের যোগ্যতা চাওয়া হয়। আর বেতন ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে অন্য সেক্টর থেকে এখানে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন নিশ্চিন্তে। শুধু প্রয়োজন নির্দিষ্ট এ যোগ্যতা ও কিছু কারিগরি অভিজ্ঞতা।









সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং



সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা। যারা নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে পছন্দ করেন তাদের জন্য এ সেক্টর উপযুক্ত স্থান। আমাদের দেশে প্রতিনিয়ত নতুন প্রতিষ্ঠান চালু হচ্ছে এবং তাদের পণ্য বাজারজাত করতে প্রচুর সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং কর্মীর প্রয়োজন হচ্ছে। যদিও এক সময় সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং একই ডিপার্টমেন্ট ছিল কিন্তু বর্তমানে সেলস ও মার্কেটিং আলাদা আলাদা ডিপার্টমেন্ট হয়েছে। সেই সঙ্গে এসব ডিপার্টমেন্টে প্রচুর দক্ষ লোকবল প্রয়োজন হচ্ছে। এ সেক্টরে চাকরির জন্য সাধারণত বিবিএ, এমবিএ এবং মার্কেটিং, ফিন্যান্স ও হিসাব বিজ্ঞানে গ্র্যাজুয়েট চাওয়া হয়। বর্তমান সময়ের সেরা ১০ ক্যারিয়ারের মধ্যে এ সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং অন্যতম। সঠিক জ্ঞান ও পরিশ্রম করলে এ সেক্টরে অল্প সময়ে ভালো অবস্থানে যাওয়া সম্ভব।









ক্রিয়েটিভ মিডিয়া



আধুনিক প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে কর্মসংস্থানের দিক ও পরিবর্তন হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সময়ের সেরা ক্যারিয়ারের মধ্যে মিডিয়া সাইড উঠে এসেছে। মিডিয়া সাইডের মধ্যে রয়েছে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া। প্রিন্ট মিডিয়ার মধ্যে রয়েছে সাংবাদিকতা, গ্রাফিক্স ডিজাইনার, ফটোগ্রাফার, আইটি প্রভৃতি এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায়ও সাংবাদিকতা, ক্যামেরাম্যান, প্রোগ্রাম তৈরি করা অর্থাৎ ডিরেক্টর, অভিনয়, উপস্থাপনাসহ অনেক সাইড।



বর্তমানে এ সেক্টরের সঙ্গে হাজার হাজার মানুষ জড়িত রয়েছে এবং দিন দিন কর্মসংস্থানের আরো সুযোগ সৃষ্টিতে এ সেক্টরের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। চাহিদা থাকার কারণে বর্তমানে অনেক প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কোর্সের ব্যবস্থা করছে এবং কিছু বেসরকারি ইউনিভার্সিটি স্বল্প মেয়াদি কোর্স চালু করছে। এ সেক্টরের চাকরির জন্য সাংবাদিকতা বিষয়ে গ্র্যাজুয়েট এবং অনার্স, মাস্টার্স ডিগ্রিসহ বিভিন্ন যোগ্যতা চাওয়া হয়। তাই এখানে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যান।



ওপরের প্রতিটি সেক্টরই বর্তমানে ক্যারিয়ার গড়ার উপযুক্ত স্থান। তাই যারা নতুন পেশা জীবনে প্রবেশ করছেন তাদের আগে নিজের সম্পর্কে জেনে এবং নিজের কর্মদক্ষতা নিজেকেই যাচাইপূর্বক এসব সেক্টরের যেটি উপযুক্ত মনে হয় সেখানে ক্যারিয়ার গড়ার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। কারণ আপনার সঠিক সিদ্ধান্তই আপনাকে আপনার জীবন সাজাতে সাহায্য করবে। আর সঠিক সিদ্ধান্তই নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দেয়। তাই জীবন সাজাতে ঠিক করে নিন আপনার ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার।









সেরা চাকরি পর্যালোচনা



দেশের কর্মবাজারের পরিসর ও আঙ্গিক বিশেস্নষণে সাধারণত কয়েকটি বৈশিষ্ট্য দৃশ্যমান হয়।



- কর্মবাজারের চাহিদা সৃষ্টিকারী প্রধান দুটি উৎস প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিকের মধ্যে অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎসই প্রাধান্য বিস্তার করে।



-- দেশের কর্মবাজার মূলত রাজধানীকেন্দ্রিক,



-- দেশে কর্মবাজারে আধা-দক্ষ ও অদক্ষ কর্মীর সরবরাহ বেশি।



-- দক্ষ ও অদক্ষ কর্মীর মাঝে বেতন বৈষম্য অত্যধিক।



কর্মসংস্থানের প্রাতিষ্ঠানিক উৎসের মধ্যে সরকারি খাতে চাকরির সুযোগ বরাবরই সঙ্কুুচিত। বেসরকারি খাতের সম্ভাবনা ও সুযোগ-সুবিধা সরকারি খাতের চেয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি। সরকারি খাতে নির্বাহী স্তরে চাকরির সুযোগ সম্ভাবনা অপেক্ষাকৃত কম পরিলক্ষিত হয়। সরকারি খাতের চাকরি সংস্কৃতির একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সারাদেশের সব অঞলে চাকরির সুযোগ বিদ্যমান। সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার কার্যক্রম সারা দেশব্যাপী বিস্তৃত হওয়ার সুবাদে দেশের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। বেসরকারি ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পক্ষে জাতীয় কর্মসংস্থানের সুযোগ এ বিচারে সীমিত।



ব্যাংক, বীমা ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান সমূহ এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। এ ক্ষেত্রে আর একটি ব্যতিক্রম খাত এনজিও খাত। দেশের প্রায় প্রতিটি গ্রাম পর্যায়ে সাংগঠনিক উপস্থিতির মাধ্যমে সরকারি প্রশাসনের প্রায় সমান্তরাল প্রশাসনিক কাঠামো স্থাপনের সুবাদে তৃণমূল পর্যায়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রয়াস পেয়েছে এ খাতটি। এমনকি দেশের যেসব স্থানে সরকারি প্রশাসনিক কাঠামো অনুপস্থিত সেখানেও এনজিও খাতের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এনজিও খাতের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো আঞ্চলিক কর্মসংস্থান, আঞ্চলিক পর্যায়ে ও ভিত্তিতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে এনজিও খাত বিশেষ মর্যাদা লাভ করেছে। অন্যদিকে জাতীয় পর্যায়ে কর্মরত ব্যাংক, বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম দেশব্যাপী বিস্তৃত হলেও, আঞ্চলিক কর্মসংস্থানে এ প্রতিষ্ঠানগুলোর তেমন কোনো ভূমিকা নেই। রাজধানীকেন্দ্রিক জনবল নিয়োগ মেধার প্রতিযোগিতায় নগরাঞ্চলের বিশেষত ঢাকা শহরের প্রার্থীরাও এগিয়ে থাকে। তবে বীমা সংস্থাগুলো মাঠ পর্যায়ে কর্মী নিয়োগের মাধ্যমে আঞ্চলিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে থাকে। এছাড়া ব্যক্তি মালিকানাধীন অন্যান্য ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোর দেশব্যাপী উপস্থিতির হার উল্লেখযোগ্য নয়। ঢাকাকেন্দ্রিক এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান কার্যালয় ও সহযোগী কার্যালয়ে সাধারণত ঢাকাকেন্দ্রিক নিয়োগদান করা হয়।



শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে কলকারখানায় আঞ্চলিক কর্মী নিয়োগের ঘটনা ঘটলেও ব্যবস্থাপক পর্যায়ে ও উচ্চতর ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে আবার সেই ঢাকাকেন্দ্রিক নিয়োগদান করা হয়। সাম্প্রতিককালে মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর দেশব্যাপী ভোক্তা সেবা কেন্দ্রের সম্প্রসারণ করার নির্বাহী পর্যায়ে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়। যা মূলত ঢাকাকেন্দ্রিক কাজের সন্ধানে ঢাকায় আসার ঐতিহ্যগত প্রবণতা এখনো বিদ্যমান এবং সেটি কার্যকারণসিদ্ধও বটে। নির্মাণ শ্রমিকদের কথাই ধরা যাক সারাদেশের নির্মান কার্যের সিংহভাগ সম্পাদিত হয় ঢাকা শহর এবং সন্নিকটবর্তী অঞ্চলে। তাই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শ্রমিকরা ঢাকা শহরে আসে জীবিকা নির্বাহের জন্য। প্রায় সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় ঢাকায় স্থাপিত হওয়ায় প্রাতিষ্ঠানিক কর্মসংস্থানের সিংহভাগই নিয়ন্ত্রিত হয় রাজধানী ঢাকা থেকে। একইভাবে দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ঢাকায় স্থাপিত হওয়ায় সারা দেশের শিক্ষার্থীরা ঢাকায় আসে উচ্চ শিক্ষার্থে। স্বভাবতই চাকরিদাতাদের নজরও থাকে যোগ্যকর্মী সংগ্রহে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর। এসব বিবেচনায় বলা যায় দেশের প্রাতিষ্ঠানিক কর্মবাজারের চাহিদা-জোগান উভয়েই নিয়ন্ত্রিত হয় রাজধানী ঢাকাকে কেন্দ্র করে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আঞ্চলিক বৈষম্য দূরীকরণে দেশের কর্মবাজারের পরিধি রাজধানী ঢাকার সীমানা ছাড়িয়ে দেশব্যাপী বিস্তৃত করা উচিত।





**************************

লেখাঃ সৈয়দ সাদরূল হুদা ও সাইফুল ইসলাম শান্ত

যায়যায়দিন, ০৪ নভেম্বর ২০০৮।